আদা খাবেন, আর যারা খাবেন না
রান্নায় মশলা হিসেবে কিংবা চায়ের সঙ্গে একটু করে আদার ব্যবহার অনেক দিন ধরেই আমাদের অভ্যাসের অংশ। আবার অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে, বা খুসখুসে কাশির মতো উপসর্গে টোটকা চিকিৎসা হিসেবেও ব্যবহার হয়। তবে আদার আরও কিছু ব্যবহার জানলে আদা খাওয়ার পরিমাণ একটু বাড়তে পারে। যেমন-
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
একাধিক গবেষণায় আদায় উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং উপকারি ভিটামিন, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে বলে প্রমাণিত হয়েছে থাকে। সেই সঙ্গে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যাতে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখে এই আদা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্মৃতিশক্তি বাড়তে শুরু করে ও বুদ্ধিরও বিকাশ ঘটে।
ওজন কমায়
অতিরিক্ত ওজনের কারণে যদি চিন্তায় থাকেন, তাহলে আদায় দারুন উপকার মিলবে। আদার থাকা একাধিক উপকারি উপাদান ক্ষিদে কমিয়ে দেয়। ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমতে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্তও মেদও ঝরতে শুরু করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসতে একেবারেই সময় লাগে না।
হজমের উন্নতি
বেশ কিছু কেস স্টাডি করে দেখা গেছে নিয়মিত সকাল বেলা যদি এক গ্লাস করে আদা পানি পান করা যায়, তাহলে পাকস্থলির কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে পাচক রসের ক্ষরণ বেড়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, গর্ভাবস্থায় সকাল সকাল যদি এই পানীয়টি খাওয়া শুরু করতে পারেন, তাহলে মর্নিং সিকনেসের মতো সমস্যা একেবারে কমে যায়
ডায়াবেটিস দূরে রাখে
নিয়মিত আদার সঙ্গে অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে পান করার অভ্যাস করলে একদিকে যেমন কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি দূর হতে শুরু করে। এই খনিজটি ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
আদায় উপস্থিত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন, যা ত্বকে জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। সেই সঙ্গে কোলাজেনের উৎপাদনও বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের সৌন্দর্য বাড়তে শুরু করে। প্রসঙ্গত, এই মশলাটিতে থাকা ভিটামিন এ এবং সি চুলের সৌন্দর্য বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ত্বকের উপর বয়সের ছাপ না পড়তে চাইলে আদা খেতে পারেন।
পেশীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
সারা সপ্তাহ দৌড়-ঝাঁপ করে কাজ করতে করতে সপ্তাহান্তে আমাদের শরীরের প্রায় প্রতিটি পেশীই বেশ ক্লান্ত হয়ে পরে। এই সময় তাদের চাঙ্গা করার জন্য এক গ্লাস আদা পানি পান করতে পারেন। আদা পেশীর কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সাবধানতা
আদার গুণ জানার পর যদি কেউ মুড়ি-মুড়কির মতো আদা খেতে শুরু করেন, তাহলে অনেক বিপদে পড়তে পারেন। কারণ আদা যেমন অনেক ক্ষেত্রে শরীরের পরম বন্ধু, আবার কিছু ক্ষেত্রে তা শরীরের চরম শত্রুও বটে। তাই আদার গুণাগুণ জানার পাশাপাশি, এটা জানাটাও অত্যন্ত জরুরি যে, কারা আদার ধার-পাশ দিয়েও যাবেন না।
অন্তঃসত্ত্বার সময় আদা শরীরে কড়া উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। সেজন্য অন্তঃসত্ত্বারা আদা খেলে, প্রিম্যাচিওর শিশু জন্মের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এজন্য গর্ভবতী মহিলাদের অবশ্যই আদা এড়িয়ে চলা উচিত। বিশেষত প্রেগন্যান্সির শেষ সপ্তাহগুলিতে তো আদা একদম খাওয়া ঠিক নয়।যারা রোগা হতে চান তাদের জন্য আদা বিশেষ উপকারী হলেও, যারা শীর্ণকায়, ওজন বাড়াতে উত্সাহী তাদের অবশ্যই আদা এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ আদা খিদে কমায়। এছাড়াও শরীরের চর্বি গলানোর প্রক্রিয়ায় আদা বিশেষ সহায়ক। সেজন্য যারা ওজন বাড়াতে চান, আদা তাদের কোনও কাজে আসবে না।ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যারা ওষুধ খান। আদা ডায়বেটিসের লেভেল কমাতে কার্যকরী হলেও, যারা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ওষুধ খান, তাদের ডায়েট চার্ট থেকে চিরতরে বাদ দিতে হবে আদাকে।উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যারা নিয়মিত ওষুধ খান, তাদেরও আদাকে এড়িয়ে চলা উচিত।
তথ্য ও ছবি: সংগৃহীত
0 Response to "আদা খাবেন, আর যারা খাবেন না "
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন